,

দেশের প্রথম ‘ছয় লেন সেতু’ নির্মিত হচ্ছে কাশিয়ানীতে

কাশিয়ানীতে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম ‘ছয় লেন সেতু’

লিয়াকত হোসেন (লিংকন): দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে গোপালগঞ্জ তথা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কাঙ্খিত কালনা মধুমতি নদীর উপর দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে। এ মাসের প্রথম সপ্তাহে এ সেতুর টেষ্ট পাইলিং শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার শংকরপাশা ও নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কালনা পয়েন্টে এ সেতু নির্মিত হবে।

গত ১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় এ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে। ইতিমধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নদীর দু’পাড়ে মালামাল আনতে শুরু করেছে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও সেতু কর্তৃপক্ষ নড়াইলের লোহাগড়ার মদিনাপাড়ায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে অফিস করেছে। পার্শ্ববর্তী গন্ধবাড়িয়া গ্রামে বাড়ি ভাড়া নিয়ে কর্মকর্তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ছয় লেনের এ সেতু হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির এবং দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে। সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬৯০ মিটার ও প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার। উভয় পাশের অ্যাপ্রোচ সড়ক হবে ৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার। সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৫৯ কোটি টাকা।

ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের পরিচালক কে এম আতিকুল হক বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ও ব্যতিক্রমী ছয় লেনের সেতু হবে কালনা সেতু। এটিই হবে দেশের প্রথম ৬ লেনের সেতু।

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে এ সেতু নির্মিত হচ্ছে। জাপানের টেককেন কর্পোরেশন, ওয়াইবিসি ও বাংলাদেশের আব্দুল মোনেম লিমিটেড যৌথভাবে এ সেতুর ঠিকাদার।

সেতু প্রকল্পের ম্যানেজার সুমন সিং জানান, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কালনা সেতুর টেস্ট পাইলিং হবে। ডিসেম্বরে মূল পাইলিংয়ের কাজ শুরু করা হবে। পাশাপাশি সংযোগ সড়কের কাজ চলবে।

তিনি আরো জানান, গত ২৪ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জাপানের টেককেন কর্পোরেশন, ওয়াইবিসি ও বাংলাদেশের আব্দুল মোনেম লিমিটেডের সঙ্গে সেতু কর্তৃপক্ষের কার্যাদেশ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। চুক্তির দিন থেকে ৩ বছরের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সম্পন্ন করতে হবে বলেও জানান তিনি।

গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খোন্দকার মো. শরিফুল আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে এ সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরবর্তী মেয়াদে সরকার গঠন করে ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সেতুটির উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মধুমতি নদীর উপর কালনা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সেতুর সাথে সংযোগ সড়কটি হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। সিলেটের তামাবিল বন্দরের সাথে এ সড়ক বিস্তৃত থাকবে। ফলে আমাদের বেনাপোল বন্দরের সাথে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ স্থাপিত হবে।

কাশিয়ানী উপজেলার শংকরপাশা গ্রামের এস্কেন্দার শেখ বলেন, কালনা ঘাটে মধুমতি নদী ফেরিতে পারাপারে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই সেতু নির্মিত হলে নড়াইল, মাগুরা, যশোর, ঝিনাইদহসহ ১০ জেলার মানুষের ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে, কমবে দুর্ভোগ ও দূরত্ব। বেনাপোল স্থল বন্দরের সাথে ঢাকার যোগাযোগ ত্বরান্বিত হবে।

নড়াইল সদর উপজেলার রতডাঙ্গা গ্রামের ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কালনা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যার কাজ এ মাসেই শুরু হতে যাচ্ছে। এটা আমাদের নড়াইলবাসীর জন্য খুবই খুশির খবর। সেতু নির্মাণ হলে আমরা কম সময়ে রাজধানীতে যাতায়াত করতে পারবো।’

কাশিয়ানী ইউপি চেয়ারম্যান মো. মশিউর রহমান খান বলেন, ‘দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে চলেছে। যা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার করছেন। ফলে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।’

এই বিভাগের আরও খবর